কোন দেশের পরিব্রাজক কার শাসনামলে কত সালে বাংলায় আসেন

কোন দেশের পরিব্রাজক কার শাসনামলে কত সালে বাংলায় আসেন

কোন-দেশের-পরিব্রাজক-কার-শাসনামলে-কত-সালে-বাংলায়-আসেন

আজকের আলোচনায় পরিব্রাজক কাকে বলে, পরিব্রাজক অর্থ, বিখ্যাত পাঁচ জন পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং, মা হুয়ান এবং ইবনে বতুতা  কোন দেশের পরিব্রাজক, এনারা কোন দেশের পরিব্রাজ,  কার শাসনামলে ও কত সালে বাংলায় আসেন বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

{tocify} Stitle={Custom Title}

পরিব্রাজক শব্দের অর্থ কি

পরিব্রাজক কি বা  পরিব্রাজক শব্দের অর্থ অনেকেই জানার চেষ্টা করেন। তাদের জন্য পরিব্রাজক শব্দের অর্থ কি বা পরিব্রাজক কাকে বলে দেওয়া হলো:-

"পরিব্রাজক" শব্দটি সংস্কৃত ভাষার উপসর্গ "পরি" এবং প্রত্যয় "ব্রাজক" থেকে উৎপন্ন হয়েছে। "পরি" অর্থ হল "প্রচুর" বা "বিস্তৃত" এবং "ব্রাজক" অর্থ হল "সফরকারী" বা "পথচারী"। তাই সমস্তকিছু একত্রে মিল করে "পরিব্রাজক" অর্থ হল প্রচুর এবং বিস্তৃত ভ্রমণকারী বা সফরকারী। পরিব্রাজক  শব্দটির আভিধানিক অর্থ অনবরত পর্যটনকারী ভিক্ষু বা সন্ন্যাসী। পরিব্রাজক হল এমন ব্যক্তি যা বিভিন্ন ধর্ম এবং বিশ্বাসের সন্ধানে বিশ্বভ্রমণ করে। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি এবং মানব অধিকার সম্পর্কে জানতে এবং এগুলো বিশ্বাস করতে পারে।

মেগাস্থিনিস

মেগাস্থিনিস ছিলেন একজন গ্রীক ঐতিহাসিক এবং ভূগোলবিদ।  তিনি তার "ইন্ডিকা" বইটির জন্য সর্বাধিক পরিচিত, যা প্রাচীন ভারতের একটি বিশদ বিবরণ প্রদান করে। মেগাস্থিনিস গ্রীক শহর এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় ভারতে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের দরবারে কাটিয়েছিলেন। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের একজন সেনাপতি সেলুকাস প্রথম তাকে দূত হিসেবে ভারতে পাঠিয়েছিলেন।

মেগাস্থিনিস রচিত গ্রন্থের নাম কি

ভারতে থাকার সময়, মেগাস্থিনিস সারা দেশে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছিলেন এবং এর রীতিনীতি, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে লিখেছেন। তাঁর বই, "ইন্ডিকা", প্রাচীন ভারতের প্রাচীনতম বিবরণগুলির মধ্যে একটি এবং ইতিহাসবিদ এবং পণ্ডিতদের জন্য তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়। "ইন্ডিকা"-তে মেগাস্থিনিস প্রাচীন ভারতের সামাজিক কাঠামো, অর্থনীতি, ধর্ম ও বিশ্বাস ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা বর্ণনা করেছেন। তিনি মৌর্য সাম্রাজ্য, এর প্রশাসন, সামরিক এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবন ও রাজত্বের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন।

মেগাস্থিনিস কার রাজত্বকালে ভারতে আসেন

ভারতের মৌর্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে ৩০২ অব্দে যখন চন্দ্রগুপ্তের রাজদরবার ছিল ভারতের পাটালিপুত্র নামক স্থানে তখন  গ্রিক ঐতিহাসিক ​মেগাস্থিনিস ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন।

মেগাস্থিনিস কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন

মেগাস্থিনিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন পব্রিাজক। তিনি আরাকোশিয়া-তে বসবাস করতেন এবং সেখান থেকেই দূত পরিচয়ে ভারত পরিভ্রমনে আসেন।

ফা হিয়েন

ফা হিয়েন ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে চীন, মধ্য এশিয়া এবং ভারতের মধ্য দিয়ে পায়ে ও নৌকায় ভ্রমণ করে তার যাত্রা শুরু করেন। তিনি বোধগয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্থানগুলি পরিদর্শন করেছিলেন, যেখানে বুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন বলে কথিত আছে । ১৪ বছর ভ্রমণ শেষে আবার তিনি চীনে ফিরে যান।

ফা হিয়েন কে ছিলেন

ফা হিয়েন ছিলেন একজন চৈনিক তীর্থযাত্রী। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের মূল গ্রন্থের সন্ধানে ও তীর্থ দর্শনে ভারতবর্ষ আসেন।

ফা হিয়েন কোন দেশের পরিব্রাজক

ফা হিয়েন চীন দেশের পরিব্রাজক।

বাংলার প্রথম চৈনিক পরিব্রাজক কে

বাংলার প্রথম চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়েন

ফা হিয়েন কখন বাংলায় আসেন

ফা হিয়েন ৪০১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় আসেন এবং ৪০১ থেকে ৪১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় অবস্থান করেন।

ফা হিয়েন কার শাসনামলে বাংলায় আসেন

চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়েন বাংলায় আসেন কার সময়ে তার নির্দিষ্ট কোনো উল্লেখ নাই। ফা হিয়েন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনামলে (৩৮০-৪১৪ খ্রিষ্টাব্দ) বাংলায় আসেন।

হিউয়েন সাং

হিউয়েন সাং ৬০২ খ্রিস্টাব্দে চীনের আধুনিক হেনান প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অল্প বয়সে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে ওঠেন এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ও দর্শনের অধ্যয়নের জন্য তাঁর উৎসর্গের জন্য পরিচিত ছিলেন।৬২৯ খ্রিস্টাব্দে, হিউয়েন সাং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি অর্জন এবং চীনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে যাত্রা শুরু করেন। তিনি বিপজ্জনক সিল্ক রোড দিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন এবং ভারতে পৌঁছানোর আগে পামির পর্বত অতিক্রম করেছিলেন, যেখানে তিনি পরবর্তী ১৬ বছর কাটিয়েছিলেন।

হিউয়েন সাঙ কে ছিলেন

হিউয়েন সাঙ একজন চীনা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং পণ্ডিত ছিলেন।  তিনি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ এবং ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির উপর তার লেখার সন্ধানে ভারতে তার ব্যাপক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

হিউয়েন সাং কোন দেশের পরিব্রাজক

হিউয়েন সাং চীন দেশীয় পরিব্রাজক। তিনি নালন্দা এবং তক্ষশীলার মহান বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন, যেখানে তিনি সংস্কৃত শিখেছিলেন এবং বৌদ্ধ দর্শন ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি সারা দেশে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেন, গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় শাসক ও পণ্ডিতদের সাথে সাক্ষাত করেন।

হিউয়েন সাং কত সালে বাংলায় আসেন

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং কত সালে বাংলায় আসেন তার নির্দিষ্ট কোনো সাল ইতিহাস থেকে জানা যায় না। তবে তিনি ৬৩০ থেকে ৬৪৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে অবস্থান করেন।

হিউয়েন সাং কার শাসনামলে বাংলায় আসেন

হিউয়েন সাং সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে বাংলায় আসেন। তিনি হর্ষবর্ধনের রাজধানী পটালীপুত্রের দুক্ষণে নালন্দা বশ্বিবিদ্যালয়ে পাঁচ বছর অধ্যয়ন ও পুঁথি নকল করেন।

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর দীক্ষাগুরু কে ছিলেন

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর দীক্ষাগুরু ছিলেন বাঙালি পণ্ডিত শীলভদ্র।

মা হুয়ান

মা হুয়ান একজন চীনা পর্যটক। ইলিয়াস শাহী বংসের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের রাজত্বকালে ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে মা হুয়ান বাংলাদেশের সোনারগাঁও সফরে আসেন। তাঁর বিবরণ হতে জানা যায় এদেশের সূক্ষ্ম বস্ত্র ও রেশম শিল্প বিখ্যাত ছিলো। গাছের ছাল হতে মসৃণ কাগজ তৈরি হতো। লোকেরা রুপার মুদ্রায় কেনা-বেচা করতো।

ইবনে বতুতা

ইবনে বতুতা ১৩০৪ সালে মরক্কোর তাঙ্গিয়ারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ২১ বছর বয়সে, তিনি তার মুসলিম বিশ্বাসের প্রয়োজন অনুসারে হজ বা তীর্থযাত্রা করার জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পরবর্তী ৩০ বছরে, ইবনে বতুতা উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সহ বিশ্বের অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি কায়রো, দামেস্ক এবং দিল্লির মতো শহর ও অঞ্চলগুলি পরিদর্শন করেছিলেন যেগুলি তখন তাদের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির উচ্চতায় ছিল।

ইবনে বতুতা কে ছিলেন

ইবনে বতুতা ছিলেন একজন মরোক্কান ভ্রমণকারী এবং পণ্ডিত যিনি ১৪ শতকে বসবাস করতেন। তিনি সমগ্র ইসলামী বিশ্ব এবং এর বাইরেও তার বিস্তৃত ভ্রমণের জন্য সর্বাধিক পরিচিত, যা তিনি তার বই "রিহলা" (দ্য ট্রাভেলস) এ নথিভুক্ত করেছেন।

ইবনে বতুতা কোন দেশের পর্যটক

পরীক্ষাতে ইবনে বতুতা কোন দেশের নাগরিক ছিলেন বা ইবনে বতুতা কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন বা ইবনে বতুতা কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন বা ইবনে বতুতা কোন দেশের পর্যটক ছিলেন যাই আসুক না কেন উত্তর একই হবে। ইবনে বতুতা মরোক্কোর পর্যটক বা নাগরিক বা অধিবাসী ছিলেন।

ইবনে বতুতার গ্রন্থের নাম কি

ইবনে বতুতার গ্রন্থের নাম রিহলা। আরবিতে কিতাবুল রেহেলা। রিহলা কথাটির সারমর্ম হল “মুসলিম সম্রাজ্য, এর শৌর্য, শহর এবং এর গৌরবান্বিত পথের প্রতি উৎসাহিদের জন্য একটি দান”। 

ইবনে বতুতা কোন শতকে বাংলায় আসেন

ইবনে বতুতা চতুর্দশ শতকে বাংলায় আসেন। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ১৩৪৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় আসেন। তাঁর বর্ণনামতে চতুর্দশ শতকে পূর্ববঙ্গে দ্রব্যমূল্য যত কম ছিলো দুনিয়ার অন্য কোথাও তিনি তেমন দেখেন নি।

ইবনে বতুতা কার আমলে বাংলায় আসেন

ইবনে বতুতা ফকরুদ্দিন মুবারক শাহের শাসনামলে বাংলায় আসেন।  তাঁর বর্ণনায় সিলেট, সোনারগাঁও, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানের বর্ননা রয়েছে। প্রথম বিদেশী পরিব্রাজক হিসেবে তিনি প্রথম  ‘‘বাঙ্গালা’’ শব্দ ব্যবহার করেন।

আজকের আলোচনায় পরিব্রাজক শব্দের অর্থ, হিউয়েন সাং কোন দেশের পরিব্রাজক, ফা হিয়েন কোন দেশের পরিব্রাজক, বাংলার প্রথম চৈনিক পরিব্রাজক কে, মেগাস্থিনিস কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন, ইবনে বতুতা কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন ইত্যাদি সকল প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভালো লাগলে শেয়ার ও কমেন্ট করে পাশে থাকুন। ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন