মুজিবনগর সরকার গঠন ও কার্যাবলী

মুজিবনগর সরকার গঠন ও কার্যাবলী

মুজিবনগর-সরকার-গঠন-ও-কার্যাবলী

মুজিবনগর সরকার

মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মুজিবনগর সরকার  গঠন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। মুজিবনগর সরকারকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা অস্থায়ী সরকার সরকারও বলা হয়ে থাকে। 

মুজিবনগর সরকার গঠন 

১৯৭০ সালের নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিগণ আগরতলায় একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার ‘মুজিবনগর সরকার’ গঠন করে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। দেশী-বিদেশী সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল।  তৎকালীন মেহেরপুরের সাব-ডিভিশন অফিসার তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এর আয়োজনে সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এর পরিচালনায় এই দিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। মেহেরপুরের ভবের পাড়া বৈদ্যনাথতলার ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ।

মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম

মুজিবনগর সরকার এর কার্যক্রমকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রম। মুজিবনগর সরকার পরিচালনার জন্য ১২ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ছিলো। প্রতিটি মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের সময় আলাদা আলাদা কার্য সম্পাদন করেছে। যেমন- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সমগ্র বাংলাদেশ ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। পররাষ্ট্র দপ্তর  বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে তোলা এবং  বন্ধু রাষ্ট্রদের কাছ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালানোর কাজ করেছে। অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অর্থ সংগ্রহ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব রেখেছে। তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযোদ্ধাদের অবিরাম উৎসাহ যোগাতে সহায়তা করে গেছে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। মুজিবনগর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাংলাদেশ মিশন স্থাপন করে এবং বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীকে দূত নিয়োগ করে।

মুজিবনগর সরকার কোন তিনটি কাজ করেছিলেন

মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

মুজিবনগর সরকারের তিনটি কাজ হলো-

১. মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা।

২. মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বহির্বিশ্বে জনমত গঠন করা।

৩. মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বন্ধু রাষ্ট্রদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা।

বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী বা মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী সচিবালয় করা হয় মুজিবনগর। পরে তা স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মুজিনগর সরকারের কার্যকাল ছিলো। মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদ ছিলো ৬ সদস্যের। 

মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদ

১. রাষ্ট্রপতি - শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার কারনে অনুপস্থিত ছিলেন।

২. উপরাষ্ট্রপতি - সৈয়দ নজরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

৩. প্রধানমন্ত্রী- তাজউদ্দীন আহমদ। প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক বিষয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

৪. মন্ত্রী- ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প এবং পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

৫. মন্ত্রী- খন্দকার মোশতাক আহমেদ। পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

৬. মন্ত্রী- এ এইচ এম কামারুজ্জামান।  স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া মুজিবনগর সরকার গঠন ও কার্যাবলীতে অংশ নেওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন:-

১. প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল এম এ জি ওসমানী।

২. বিমান বাহিনী প্রধান ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার।

৩. চিফ অব স্টাফ ছিলেন কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রব (এম.এ. রব)। 

৪. মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন উইং কমান্ডার আবদুল করিম।

৫. মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ.টি. ইমাম)।

তাহলে আজকের আলোচনাতে মুজিবনগর সরকার গঠন ও কার্যাবলী এবং মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই বিষয়গুলো থেকে আপনাদের আর কোনো প্রশ্নের উত্তর অজানা নেই। তারপরেও যদি কিছু জানার থাকে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।

মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে আরো জানুন এখান থেকে-

মুজিবনগর সরকার সাধারণ জ্ঞান। চাকরির পরীক্ষাতে মুজিবনগর সরকার বিষয়ক আসা সকল এমসিকিউ প্রশ্ন ও উত্তর।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন